মুহাম্মদ মিজান বিন তাহের, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সূর্যসন্তান মজিবুল হক (৬৯)। হওয়ার কথা ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ‘মুক্তিযোদ্ধা’। কিন্তু সেই মূল্যায়ণ করা হয়নি। সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। নিজ গ্রামের মানুষসহ উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা মজিবুল হক কে মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও স্বাধিনতার ৫৩ বছরে এসেও কাগজে-কলমে তাঁর স্বীকৃতি মেলেনি। বর্তামানে আইন পেশার সাথে জড়িত আছেন তিনি। তাঁর সহকর্মী যোদ্ধারা সরকারী গেজেটে অর্ন্তভূক্ত আছে। তিনি কেন গেজটভুক্ত হতে পারেননি, কেন তিনি বৈষম্যের শিকার তাঁর কাছে এখনো অস্পষ্ট। শেষ বয়সে এসে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান এ বীরযোদ্ধা।
মজিবুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের মরহুম ওবাইদুল হকের পুত্র। যথেষ্ট প্রমাণাধি সরকারী দপ্তরে জমা দেওয়া হলেও স্বাধিনতার চার যুগ পেরিয়েও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি না মেলায় অনুতপ্ত সহকর্মী অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও।
মজিবুল হক জানান, '১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ বাঁশখালী থানাধিন পুকুরিয়া ইউনিয়নে কমান্ডার মরহুম শফিকুল ইসলামের অধীনে আমি সহ আমরা সর্বমোট ৩৩ জন যুবক সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি এবং বাঁশখালী থানায় আমরাই সর্বপ্রথম পুকুরিয়া ইউনিয়ন হানাদার মুক্ত করি। তৎপর আনোয়ারা থানা এবং সাতকানিয়া থানায়ও আমরা সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমি বাঁশখালী থানার অর্ন্তগত পুকুরিয়া ইউনিয়নের কুন্ডুরাম পাহাড় এবং চা বাগান এলাকায় ৩০৩ রাইফেল পরিচালনায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সরাসরি কমান্ডার মরহুম শ্রদ্ধেয় শফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ১ নম্বর সেক্টরে অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমাদের অধিনায়ক কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল 'ইসলাম। আমার সহযোদ্ধা সবাই গেজেটভুক্ত হয়েছেন।'
তিনি আরো বলেন, 'যুদ্ধের সমাপ্তিতে দেশ স্বাধিন হওয়ার পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী এর স্বাক্ষরক্রমে দেশরক্ষা বিভাগ হতে আমার বরাবরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ ইস্যু করেন।'
মজিবুল হক আক্ষেপ করে বলেন, 'দেশ মার্তৃকার টানে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে শত্রুমুক্ত করা সত্ত্বেও এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রমাণাদি সরকারী দপ্তরে জমা দেওয়া সত্ত্বেও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অদ্যাবধি আমাকে প্রদান করা হয়নি।'
ইতিপূর্বে দুই দুইবার মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন জমা দেওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় হতে অদৃশ্য কারণে হ্যাঁ বা না কোন জবাব অদ্যাবধি তাঁকে প্রদান করা হয়নি। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু বাংলাদেশ সরকার হতে পাওয়া এবং তা দেখার অপেক্ষায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্রযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক একুতোভয় যোদ্ধার শেষ আকুতি।
তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি বড় করে দেখছি না, জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এটা দেখে যেতে চাই।'
মোবাইল : 017 99 59 59 ইমেইল : [email protected]
www.chattogrampost.com facebook.com/DainikChattogramPost
Copyright © 2025 দৈনিক চট্টগ্রাম পোস্ট. All rights reserved.