২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল এগারো ঘটিকা হতে উপজেলা রাঙামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৪ এ জুলাই- আগষ্টে ছাত্র- জনতার গনঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদের স্মরণে তাদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে স্মরণ সভা, লংগদু উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরি মিলয়াতনে অনুষ্ঠিত হয়।
লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার কফিল উদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নব গঠিত জেলা সদস্য মিনহাজ মুরশীদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন লংগদু উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম লংগদু উপজেলার আমির নাছির উদ্দিন, লংগদু অফিসার্স ইনচার্জ স্বরজিৎ, লংগদু প্রেস ক্লাবের সভাপতি /সাধারণ সম্পাদক, জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ তাঁদের পরিবার সহ উপস্থিত আরোও নেতৃবৃন্দরা।
এ সময় উপস্থিত বক্তৃতায় উঠে আসে কোটা সংস্কারের এক ন্যায্য দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনই পরবর্তীতে শাসকশ্রেণির হঠকারিতায় সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেয়। এই কোটা সংস্কারের জন্য ছাত্ররা ২০১৮ সালেও আন্দোলন করেছিল। তখন স্বয়ং শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার না করে কোটা বাতিল করে দেন। ২০২৪ সালে কৌশলে সেই কোটা বাতিলের পরিপত্র হাইকোর্টে বাতিল করা হয়। এই নাটকীয়তার ফলে ছাত্রসমাজ নতুন করে আন্দোলন শুরু করে। শেখ হাসিনা ছাত্রদেরকে রাজাকার হিসেবে তাচ্ছিল্য করেন। যা আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো কাজ করে। ছাত্ররা ‘আমি কে, তুমি কে? রাজাকার রাজাকার। কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। এই ঐতিহাসিক স্লোগান দিতে দিতে রাতের অন্ধকারে ঢাবির সকল হলের তালা ভেঙে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। এই এক স্লোগান সমগ্র দেশে আন্দোলনের চিত্রই সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দেয়।
সরকার নিরুপায় হয়ে তার হানাদার লীগের হেলমেট বাহিনীকে নামিয়ে দেয়। হানাদার লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রীদের উপর হামলা চালায়। ছাত্রীদের উপর চালানো এই নৃশংস হামলায় পুরো দেশের ছাত্রসমাজ কেঁপে ওঠে। পাবলিকের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও নেমে আসে। সরকার উপায়ন্তর না দেখে পুলিশ বাহিনীকে সরাসরি গুলি চালানোর আদেশ দেয়। বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই প্রায় ৫০ জন ছাত্র সারা দেশে পুলিশের গুলিতে মারা যায়। পুরো দেশ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ফুঁসে ওঠে।
অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। এমনকি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ব্রডব্যান্ড ওয়াইফাই লাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার (১৯ জুলাই) লাখো জনতা ঢাকার রাজপথে নেমে আসে। এক ভয়ংকর গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই গণঅভ্যুত্থান দমনে সরকার বিজিবি র্যাব ও পুলিশ বাহিনীকে হিংস্র হায়েনার মতো নিরস্ত্র জনগণের উপর ছেড়ে দেয়। হেলিকপ্টার, স্নাইপার সকল মাধ্যম ব্যবহার করে শত শত নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করা হয়। পুরো দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়।
পাঁচ দিন পর ইন্টারনেটে ফেরত আসলে হত্যার বিভিন্ন ভয়ংকর ফুটেজ বের হয়ে আসতে থাকে। একেকটি ফুটেজ পুরো দেশের মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। পুরো দেশের মানুষ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। সবার দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা তৈরি হয়। কেউ রাতে ভালো মতো ঘুমাতে পারে না। এই অবস্থায় সমন্বয়কদের ডিবি উঠিয়ে নিয়ে গেলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। সরকার সমগ্র দেশে ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। সরকারের এই নিপীড়নে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে ঘরে চুপ করে বসে থাকা সম্ভব ছিল না। প্রথমত, শিক্ষকগণ প্রতিবাদ জানানো শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে শিল্পীসমাজ, মধ্যবিত্ত এমনকি গুলশান-ধানমন্ডির উচ্চবিত্ত পরিবারেরাও রাজপথে নেমে আসে।
মিরপুর ও মহাখালী ডিওএইচএসের সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারেরাও রাজপথে নেমে আসে। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত-নিহত ছাত্র দেখতে না গিয়ে মেট্ররেল দেখতে গিয়ে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলেন। যা তার হিংস্র চোহারা জনগণের সামনে স্পষ্ট করে দেয়। এভাবেই সরকার পতনের মাহেন্দ্রক্ষণের সূচনা হয়। শহীদ মিনারের বিশাল ছাত্রজনতার সমাবেশ থেকে এক দফার ঘোষণা দেওয়া হয়। গণভবন ঘেরাও এর ডাক আসে। সেনাবাহিনী জনগণের বুকের উপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানায়। সেনাবাহিনী অস্বীকৃতি জানালে পুলিশও জানায় তাদের পক্ষে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এভাবে ৫ আগস্ট লাখো জনতার পদচারণায় দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সমগ্র দেশের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস গ্রহণ করে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, পরবর্তী বিক্ষোভ ও সরকারের পতনের পর সব মিলিয়ে সহিংসতায় ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ৫৮০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪০ জন নিহতের খবর পাওয়া গিয়েছিল।