

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার অপরাধে একজনকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার ঘটনায় ৯ জনকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করে ক্ষান্ত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক তানভির এম এইচ আরিফের অশালীন মন্তব্যকে ঘিরে ছড়িয়ে পড়েছে বিতর্ক।
তিনি তাঁর ফেসবুক পোস্টে, জুলাই বিপ্লবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীদের প্রসাশনের সীদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় পলটিবাজ ও হানি ট্র্যাপে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি লিখেন, “বিপ্লবীরাও কি হানি ট্র্যাপে? নাহলে কি দেখলাম! পল্টিবাজি কেন?”
বক্তব্যের পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি হয়ে প্রক্টরের এই ধরনের ‘ঘৃণ্যজাতকরণমূলক’ মন্তব্য দায়িত্বহীন ও অনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। তাদের মতে, এটি বিদ্বেষমূলক ও ছাত্র আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।
জমির সালেহিন নামের এক শিক্ষার্থী এক সংবাদ-মাধ্যমকে জানিয়েছেন, “একজন প্রশাসনিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য কেবলই বিদ্বেষমূলক প্রচারণা। এটি আন্দোলনকারীদের প্রতি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগের কৌশল।”
শিক্ষক সমিতির একাংশও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, প্রশাসনের দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘হানি ট্র্যাপ’ শব্দটি সাধারণত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য মূলত তাদের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরির কৌশল।
এই বিতর্কের পর অধ্যাপক তানভির তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা আরও অস্পষ্টতা তৈরি করেছে। তিনি দাবি করেছেন, এটি ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ছিল না, বরং ‘পর্যবেক্ষণের’ ফল। তবে, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশ বলছে, প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা কারো এমন ‘পর্যবেক্ষণ’ কেবল পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবকেই প্রকাশ করে।
এই ঘটনায় চবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনো আসেনি। তবে, শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রক্টরের বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে।
এ বিষয়ে উপাচার্যের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যক্তিরা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকেন।