পরিবার-পরিজন, শৈশবের মাঠ, প্রিয় মানুষের হাসিমুখ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান হাজারো বাংলাদেশি। লক্ষ্য একটাই—ভাগ্য বদলানো। একটু ভালো আয়, একটু স্বচ্ছলতা, সন্তানের মুখে হাসি—এই চাওয়াই তাদের জীবনের চালিকাশক্তি। এই স্বপ্নে নিজের শৈশবের গ্রাম, মায়ের হাতের রান্না, সন্তানের হাসি, স্ত্রীর অপেক্ষা—সবকিছু রেখে পাড়ি দেন অজানার উদ্দেশ্যে। প্রতিবছর এই আশায় হাজার হাজার শ্রমিক সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেন। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের পথ এতটা সহজ নয়।
বিদেশে পা রাখার পরই শুরু হয় জীবনের আরেক অধ্যায়—যেখানে অপেক্ষা করে অপরিচিত ভাষা, সংস্কৃতি, নিঃসঙ্গতা, আর প্রায়ই নিষ্ঠুর কর্মজীবন। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমিকেরা প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করেন কঠিন পরিবেশে। প্রচণ্ড গরম, অনিরাপদ নির্মাণস্থান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও চিকিৎসা সুবিধার অভাব—এসব তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। কোথাও নেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা, নেই শ্রম অধিকার, অনেক সময় নেই ন্যায্য মজুরিও।
এত কষ্টের পরও তারা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেন। কারণ পেছনে রয়েছে পরিবারের দায়িত্ব—মায়ের ওষুধ, সন্তানের স্কুল ফি, ঘরের চাল-ডাল। প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে তারা একটানা কাজ করে যান, নিজের জীবন-সুরক্ষা ভুলে গিয়ে।
তবে এই স্বপ্নের পথে যেসব প্রবাসী প্রাণ হারান, যাঁদের পরিবার আর কখনও তাদের ফিরে পায় না, তাদের জন্য যেন বিশ্বব্যবস্থায় খুব বেশি জায়গা থাকে না। নিঃশব্দে হারিয়ে যায় সেই স্বপ্নগুলো। তাই এখন সময় এসেছে শুধু প্রবাসী আয়কে স্বাগত না জানিয়ে, তাদের নিরাপত্তা, অধিকার ও মর্যাদাকেও গুরুত্ব দেওয়ার।
কারণ, বিদেশে গিয়ে কাজ করবেন, কিছু বেশি পারিশ্রমিক পাবেন এবং পরিবার ভালো থাকবে—এটুকুই তো চাওয়া। এতটুকু চাওয়া পূরণ করতে রাষ্ট্রের, নিয়োগকর্তার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
পরিবার পরিজন ছেড়ে, জন্মভূমি ছেড়ে মানুষ প্রবাসে যান ভাগ্য বদলের আশায়। বিদেশে গিয়ে কাজ করবেন, কিছু বেশি পারিশ্রমিক পাবেন এবং পরিবার ভালো থাকবে—এটুকুই তো চাওয়া। আর এই চাওয়াটুকু সামনে নিয়েই প্রতিবছর শ্রমিক হিসেবে যান অনেক বাংলাদেশিরা।
মোবাইল : 017 99 59 59 ইমেইল : [email protected]
www.chattogrampost.com facebook.com/DainikChattogramPost
Copyright © 2025 দৈনিক চট্টগ্রাম পোস্ট. All rights reserved.