

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির সদ্য নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক নই সৈয়দ আবিদ হোসাইন সামী। সোমবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে ৩টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন সামী।
আবিদ হোসাইন সামী লেখেন, বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক নই। যেদিন আমার ব্যাপারে প্রেস রিলিজ হয়, সেদিন থেকেই একটা মহল আমার রেপুটেশন খারাপ করার ব্যাপারে সক্রিয়। কেন, কি কারণে তা আমার জানা নেই। প্রথমত, আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে এই জায়গায় আসিনি। প্রেসিডেন্ট আমাকে চেয়েছেন এ কারণে আমি গেছি। প্রথমদিনই বলা হয়েছে, এই দায়িত্বটা ভলান্টিয়ারি অর্থাৎ কোন সম্মানি বা পারিশ্রমিক নেই, এবং প্রেসিডেন্ট শুধু যে সব বিষয়ে আমার সাজেশন চাইবেন আমি সেসব বিষয়ে সাজেশন দিতে পারবো ।
সামী লেখেন, আমি যেদিন প্রথম যাই সেদিন একটি মিটিং চলছিল অনুর্ধ্ব ১২ ক্রিকেট কার্নিভাল নিয়ে, যা প্রেসিডেন্ট ক্রিকেট ডিসেন্ট্রালাইজেশনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিয়েছিলেন। সেই মিটিং এ বিসিবির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ইনচার্জরা ছিলেন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছিলেন। আমি সেখানে ইনপুট দিলাম পেসার হান্ট কম্পিটিশন, প্যারেন্টাল কোচিং গাইডলাইন এবং বাচ্চাদের বাংলাদেশের টেস্ট মুহূর্তের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার ব্যাপারে যা সবাই তখন প্রশংসাও করেছিলেন। পেসার হান্টটা কাজেও লেগে গেছে, ১৩৪ কিমি এর বোলার পাওয়া গেছে সিলেট-চট্টগ্রামে।
এরপর গত ২২ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত আমি দেশের ৪ টা বিভাগে গেছি, ৩ টা তে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গিয়েছি, চট্টগ্রামে নান্নু ভাই, বাশার ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছি। প্রতিটা বিভাগে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে ডিসেন্ট্রালাইজেশন নিয়ে বৈঠক, অবকাঠামোর সমস্যা পরিদর্শন, স্থানীয় খেলোয়াড়-নারী ক্রিকেটার, গ্রাউন্ডসম্যান, জেলা লিগ না হওয়ার কারণ ইত্যাদি কাগজে কলমে নোট করে সেই অনুযায়ী প্রতিদিন প্রেসিডেন্টসহ স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টকে ডে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। যারা সেই বিভাগগুলোতে ছিলেন, তারা বলতে পারবেন আমার মধ্যে এফোর্টের কোন কমতি দেখেছেন কি না। মাঝে ২৬ তারিখ বাদ দিয়ে ২৫ তারিখ ঢাকায় প্রোগ্রাম ছিল। ৬ দিনে ৪ টা বিভাগে ডিসেন্ট্রালাইজেশনের জন্য ডাটা সংগ্রহ ও কাগজ কলমের কাজ করেছি।
তিনি লেখেন, এর মধ্যে একটা গোষ্ঠী প্রেসিডেন্টকে প্যানিক করা শুরু করলেন আমি কেন সেই বিভাগগুলোতে গিয়ে কন্টেন্ট করছি? এটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট। আমি কন্টেন্ট করছি মূল সমস্যা আরও স্বচ্ছভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে। গত এতগুলো বছরে যেগুলো সমস্যা আইডেন্টিফাই করা যায়নি সেগুলো সবার সামনে তুলে ধরলে সমস্যাটা কোথায় আমি জানি না বা আমার এখনো বুঝে আসে নি। সেই সঙ্গে বিসিবি যে এগুলোর সমাধানের উদ্যোগ নিতে চায় সেই ব্যাপারটাকেও সবার সামনে তুলে ধরাটা জরুরী বলে আমার মনে হয়েছে। রংপুরে আউটার মাঠে মেলা বসে মাঠকে গার্বেজ বানানো, আউটফিল্ডে সমস্যা, রাজশাহী স্টেডিয়ামে কি সংস্কার প্রয়োজন, চট্টগ্রামে জেলা লিগ কেন হচ্ছে না। আমি যদি এই সমস্যা তুলে ধরি তাতে সমস্যা কোথায়? এতে তো আরও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্ট থাকে, স্বচ্ছতা থাকে।
আবিদ লেখেন, প্রথমত কন্টেন্ট তৈরি করা আমার প্রফেশন সেটা জেনেই কিন্তু আমাকে এখানে নেয়া হয়েছে। বিসিবির সঙ্গে আমার কোন আর্থিক চুক্তি হয়নি, উপদেষ্টা পদের কোন বেতন নেই। আর আমার কন্টেন্টের জন্য যে ক্যামেরাম্যান যাচ্ছে তা অন্য সাধারণ মিডিয়ার মতই অনফিল্ড প্রতিষ্ঠান তাদের নিজের খরচে যাচ্ছে। আগের দিন ভেন্যুতে অনফিল্ডের ক্যামেরাম্যান এবং রিপোর্টার চলে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রেসিডেন্টকে প্যানিক করছে একটা মহল, যেটা প্রেসিডেন্টের মত একজন দেশপ্রেমিক মানুষ তার নিজের কাজ থেকে মনোযোগ হারাচ্ছেন। সারাদিনের একটা সফল কার্যক্রম শেষে তার মুখ থেকে হাসি উড়ে যাচ্ছে। এবং সেটা শুধুমাত্র আমাকে নিয়ে একটা মহলের তৈরি করা কৃত্রিম সংকটকে কেন্দ্র করে। এরকম একজন এফিশিয়েন্ট প্রেসিডেন্টকে ডিস্ট্র্যাক্ট করা হচ্ছে বারবার।
এই মহলটা সামনের দিনগুলোতে আরও সমস্যা তৈরি করবে। আমার কাছের মানুষজন আমাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এটা তারা Out of jealousy করছেন। কিসের জেলাসি, কেন জেলাসি আমি জানি না। আমি এটুকু জানি, দেশের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেটার, কোচদের সঙ্গে গত ১০ বছর সময় কাটিয়ে যে সমস্যাগুলো দেখেছিলাম সেগুলোকে লাঘব করার জন্য প্রেসিডেন্টকে অ্যাসিস্ট করার এই প্রস্তাবটা নিয়েছিলাম। সেই প্রেসিডেন্টই যদি কাজ করতে গিয়ে বাঁধাগ্রস্ত হন, আমার সেখানে থাকার কোন মানে হয় না। বিসিবিতে যে কয়দিন গেছি, আমার পকেট থেকেই উবার ভাড়া গেছে। প্রতিটা বিভাগে ভলান্টিয়ারি কাজ করে শেষে আবার রাত ৮ টায় যমুনা টিভিতে নিউজও পড়েছি। এর মধ্যে বিসিবিতে ডে রিপোর্টও দিয়েছি। আবার পরদিন ভোরে অন্য বিভাগে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছি।
তিনি আরও লেখেন, আমি রাজনীতিবিদও না, আমি বড় ব্যবসায়ীও না, কোন বড় ব্যাক আপ ও আমার নেই। ডার্টি পলিটিক্স ডিল করা আমার কাজ না, বা এটা ডিল করতেও আমি এখানে আসিনি। আমি যেটা পারি তা হল, আপনি আমাকে যে কাজ দেবেন, সেই কাজটা দিনে ১৭-১৮ ঘণ্টা খেটে বেস্ট আউটপুটটা দেয়ার জন্য। এ কারণেই গত ১০ বছরে যমুনা টেলিভিশন থেকে আমার চাকরী যায় নি, সব টিভি চ্যানেলই খেলার প্রি বা পোস্ট শো আমাকে নিয়েই করে। কারণ আমার রিসার্চ-হোমওয়ার্ক এবং এফোর্ট ভালো দেখেই তারা আমাকে নেন। আমি শুধু কাজটাই করতে পারি। তাই অন্যের কাজের ক্ষ’তির কারণ আমি হতে চাই না। আমি আমার ব্যক্তিত্বের জায়গায় আপোষ করতে পারবো না ভাই। আমার জীবনে ওইটাই সবথেকে বড় সম্পদ। তবে এই ১০ দিনে ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, আমার জ্ঞানের পাল্লায় সেগুলোকে অর্জন হিসেবে নিচ্ছি।
সামি আরও বলেন, বুলবুল ভাই দেশের ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার পথ শুরু করবেন, আমি থাকলে তিনি পদে পদে বাঁধাপ্রাপ্ত হবেন, বিতর্কিত হবেন। উনার কাজের স্পিরিট থাকবে না। একটা বাস্তবতার শিক্ষা আমার স্ত্রী আমাকে বলতো, “বাংলাদেশে শুধু মেরিট বা শুধু ট্যালেন্ট দিয়ে কিছু হয় না” – আজ আবার মনে হল, Wife is always right.