শুক্রবার , ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আরও

শিক্ষা

পাঠ্যবইয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’। ২০২৪ সালের এই ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ে সীমিতভাবে স্থান পেয়েছে। আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এটি আরও বিস্তৃত পরিসরে এবং পূর্ণাঙ্গ অধ্যায় আকারে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে ধারাবাহিকতা রক্ষায় যুক্ত হচ্ছে ১৯৭১-পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাসও। ইতোমধ্যে পাঠ চূড়ান্ত হয়েছে এবং এ বিষয়ে সরকারের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) পক্ষ থেকেও চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বইয়ে শিক্ষার্থীদের বয়স ও বোধগম্যতা অনুযায়ী বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এক্ষেত্রে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে এক থেকে তিন নম্বর পৃষ্ঠায় থাকতে পারে জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য। আর নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে বিষয়টি আরও গভীরভাবে থাকবে। এখানে পূর্ণাঙ্গ একটি অধ্যায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা থেকে আন্দোলনের পটভূমি, বিভিন্ন স্তরের অংশগ্রহণ, সহিংসতার দিনগুলো, নিহতদের স্মৃতি এবং রাজনৈতিক পরিণতি নিয়েও শিক্ষার্থীরা বিস্তৃত ধারণা পাবে।

শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানই ইতিহাসের অংশ হিসেবে নয়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ে স্বাধীনতা-উত্তর সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের চিত্রও তুলে ধরা হবে। এতে থাকবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আসবে বিশ্লেষণধর্মী পাঠ। উচ্চ মাধ্যমিকের সাহিত্যপাঠ বইয়ে প্রবন্ধ আকারে জুলাই আন্দোলনকে তুলে ধরা হবে মানবিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। আর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে এটি থাকবে একটি সমকালীন প্রবন্ধ হিসেবে। যদিও ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বইয়ে জুলাই আন্দোলন নিয়ে সীমিত পরিসরে কিছু লেখা ছিল প্রবন্ধ বা গল্প আকারে। তবে, এবারের সংযোজন অনেক বেশি বিস্তৃত।

এনসিটিবি বলছে, আগের সীমিত লেখাগুলোতে আন্দোলনের পূর্ণ প্রেক্ষাপট উঠে আসেনি। এবার সম্পূর্ণ বিবরণ ও শিক্ষণীয় দিক যুক্ত করা হয়েছে। আর পাঠ্যপুস্তকে শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থান নয়, পূর্ববর্তী গণঅভ্যুত্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাও থাকবে। শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিক রূপ দেখতে পাবে। এনসিটিবি কর্মকর্তাদের মতে, এতে ইতিহাস উঠে আসবে ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে নয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটিও (এনসিসি) বলছে, শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানই ইতিহাসের অংশ হিসেবে নয়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায়ে স্বাধীনতা-উত্তর সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের চিত্রও তুলে ধরা হবে। এতে থাকবে ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ। আর শিক্ষার্থীদের বয়স ও মানসিক পরিপক্বতা বিবেচনায় পাঠের পরিমাণ, ভাষা ও ব্যাখ্যা প্রতিটি শ্রেণির জন্য ভিন্নভাবে সাজানো হবে।

এনসিটিবির শিক্ষা ও সম্পাদনা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের একটি অধ্যায়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পাঠ যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিটি শ্রেণিতে পাঠের নাম ভিন্ন দেওয়া হয়েছে। তবে, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে এটি কোন অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং পাঠের নাম কী হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি কাজ করছে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আসবে বিশ্লেষণধর্মী পাঠ। উচ্চ মাধ্যমিকের সাহিত্যপাঠ বইয়ে প্রবন্ধ আকারে জুলাই আন্দোলনকে তুলে ধরা হবে মানবিক-সামাজিক প্রেক্ষাপটে। আর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ে এটি থাকবে একটি সমকালীন প্রবন্ধ হিসেবে
এনসিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান’ নামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে এটি প্রথম অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রাম ও গণআন্দোলন’ অংশ হিসেবে স্থান পাবে। অষ্টম শ্রেণির বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গণঅভ্যুত্থান’ বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হবে। আর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান’ শিরোনামে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে। একইসঙ্গে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়েও যেন এসব বিষয় যুক্ত হয় সেজন্য নেওয়া হচ্ছে জোর প্রস্তুতি।

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ যেমন এক বিরাট সংগ্রামের নাম, জুলাই গণঅভ্যুত্থানও তারই ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক। এটি শুধু স্বৈরাচার বা একতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন নয়, বরং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে যুবসমাজের সাহসিকতার প্রতীক।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম সাহসী অংশগ্রহণ দেখিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ ও ঐক্যে ভবিষ্যতের বৈষম্যহীন সুন্দর বাংলাদেশের রূপরেখা পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের কাছে এই ইতিহাস তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আগের বছর সংক্ষিপ্ত সময়ের কারণে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিষয়টি সীমিত পরিসরে যুক্ত করা হয়েছিল।


সম্পর্কিত খবর