

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দিবো না”, “তুমি কে আমি কে, সুমাইয়া সুমাইয়া”, “আমার বোন মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই”, “আমার বোন কবরে, খুনি কেনো বাহিরে” ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
সুমাইয়ার সহপাঠী লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, ‘গত ৭ সেপ্টেম্বর সুমাইয়াকে হত্যা করা হলেও আমরা জানতে পারি ৮ সেপ্টেম্বর। আজকে ১১ সেপ্টেম্বর হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কি কারণে সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে সে রহস্য প্রশাসন উন্মোচন করতে পারেনি। আমরা আরও জানতে পারি যে সুমাইয়া এবং তার মাকে হত্যা করেছে সে ২০২৩ সালের ধর্ষণ চেষ্টা মামলার আসামি।
২০২৩ সালের ওয়ারেন্ট আসামি হওয়ার পরেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত সে বাহিরে থাকে কীভাবে? পুলিশ যদি তাকে আগেই গ্রেফতার করে রাখতো তাহলে আজকের এই নির্মমতার সাক্ষী হওয়া লাগতো না আমাদের। সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি নিশ্চিত না হবে ততোদিন আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
কুবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আবুল বাশার বলে, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মাকে হত্যার যে রহস্য তা এখনো উন্মোচন হয়নি। আমরা চাই প্রশাসন তা দ্রুত উন্মোচন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আপনারা একটা টিম করে নিয়মিত আপডেট আমাদেরকে দেন। আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি এখানে শেষ নয়, যেই পর্যন্ত সুমাইয়া হত্যার বিচার হবে আমরা মানববন্ধন চালু রাখব। যদি প্রয়োজন হয় আমরা পুরো কুমিল্লা অচল করে দেব। যদি প্রশাসন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন না করে তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’
কুবি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এরকম নির্মম ঘটনার সম্মুখীন কখনো হয় নাই। কুবির শিক্ষার্থীরা আজকে কোথাও নিরাপদ নয়। কুবির শিক্ষার্থীদের আজকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়, অপহরণ করা হয়, ছিনতাই করা এমনকি হত্যাও করা হয়। আমরা কুবির শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি অতিদ্রুত নিশ্চিত না করা হয় তাহলে কুমিল্লার জমিনকে আমরা সারাদেশ থেকে আলাদা করে দিব।’
লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোসা. শামসুন্নাহার বলেন, ‘সুমাইয়া খুব নম্র, ভদ্র ও মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার সাথে কোনোদিন কারো কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হয়নি। তার সাথে ঘটা এই রকম নৃশংস ঘটনা যাতে কোথায় আর না ঘটে। প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। সুমাইয়া ও তার মায়ের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত যা যা করা লাগবে আমরা লোক প্রশাসন বিভাগ তা করব।
কিন্তু, এই ঘটনার সাথে অন্য কোনো ঘটনা ও রহস্য থেকে থাকে সেই রহস্য উন্মোচন করতে হবে৷ পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘায়িত না হয়। আসামির সাথে জড়িত অন্যদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এই ঘটনা যাতে কোনোভাবে ধামাচাপা দেওয়া না হয়। প্রকৃত ঘটনা সবার সামনে উন্মোচন করা হোক৷’
উল্লেখ্য, গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লার কালিয়াজুরী এলাকায় নিজ ভাড়া বাসা থেকে সুমাইয়া ও তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরই মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি গ্রেফতারকৃত আসামি মোবারক হোসেনই উক্ত হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা।